সর্বশেষ

মালয়েশিয়ায় এক বছরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থী বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এডুকেশন মালয়েশিয়া গ্লোবাল সার্ভিসের (ইএমজিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন ৬ হাজার ১০৩ জন। আর চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ৯৫৭ জন। অর্থাৎ এক বছরে দেশটিতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভর্তি বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।

ইএমজিএসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় যেসব দেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের মধ্যে প্রথম অবস্থানে আছে চীন। দেশটি থেকে চলতি বছর ২৯ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালে দেশটি থেকে মালয়েশিয়ায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার ২০২ জন। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে বাংলাদেশ ও ভারত। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, তুলনামূলক কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা, রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন, সামাজিক নিরাপত্তা এবং ইউরোপীয় দেশগুলোয় গ্রহণযোগ্যতার মতো বিষয় দেশটিকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কাছে দিন দিন আকর্ষণীয় গন্তব্য করে তুলছে।

ইন্টার ন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়াতে (আইআইইউএম) স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী সুমাইয়া জাফরিন চৌধুরী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মান এবং গবেষণার সুযোগ-সুবিধায় অনেক এগিয়ে আছে। সে তুলনায় এখানে শিক্ষা ও জীবনযাত্রার ব্যয় কম। সেলফ ফান্ডিংয়ে এলেও ভর্তির পর বিভিন্ন বৃত্তি ও ফান্ডিং লাভের সুযোগ আছে। এখানে ভর্তি প্রক্রিয়াও তুলনামূলক সহজ। বেশির ভাগ দেশে আইইএলটিএস বাধ্যতামূলক হলেও মালয়েশিয়ায় তা নয়। এখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মাকেও আনার সুযোগ পান। এর পাশাপাশি মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারীরা বিশ্বের নামি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে সহজে ভর্তির সুযোগ পান। অনেকে হয়তো বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ইউরোপের দেশগুলোয় যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না কিন্তু তারা মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করে পরবর্তী সময়ে সহজেই এসব দেশে যাওয়ার সুযোগ পান। এসব কারণেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী মালয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এ শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘মালয়েশিয়াকে বেছে নেয়ার আরো একটি কারণ হলো দুই দেশের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পরিবেশের মিল রয়েছে। আবার দূরত্ব তুলনামূলক কম। অন্যান্য দেশে বাবা-মা চাইলেই সন্তানকে দেখতে যেতে পারেন না। ভিসা জটিলতা, উচ্চব্যয়সহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকে কিন্তু এখানে তেমনটি নেই। সহজেই যাতায়াত করা যায়। এ কারণেও অনেক শিক্ষার্থী দেশটিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বেশ এগিয়েছে। বর্তমানে মালয়েশিয়ার মোট ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয় টাইমস হায়ার এডুকেশনের বৈশ্বিক তালিকায় রয়েছে, যা ইন্দোনেশিয়ার পর আসিয়ান অঞ্চলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‍্যাংকিংস ২০২৬’ অনুযায়ী, আসিয়ান অঞ্চলের শীর্ষ ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সাতটিই মালয়েশিয়ার। র‌্যাংকিংয়ে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর (এনইউএস) ও নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (এনটিইউ) যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে। এরপরই রয়েছে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি পেট্রোনাস (ইউটিপি) ও ইউনিভার্সিটি মালায়া (ইউএম)। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে ২০১-২৫০ ব্যান্ডে অবস্থান করছে। সানওয়ে ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) রয়েছে ৩০১-৩৫০ ব্যান্ডে। এছাড়া ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া (ইউএসএম), ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়া (ইউটিএম) এবং ইউনিভার্সিটি উতারা মালয়েশিয়া (ইউইউএম)—এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৪০১-৫০০ ব্যান্ডে।

যুদ্ধ অবসানে ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক আগামীকাল

শিক্ষার মান ও পরিবেশ মালয়েশিয়াকে বেছে নেয়ার পেছনে অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে শিক্ষার মান আশানুরূপ নয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোয় রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে। তুলনামূলক সামর্থ্যবান অভিভাবকরা সবসময়ই চান সন্তানের জন্য মানসম্মত ও নিরাপদ শিক্ষা নিশ্চিত করতে। মালয়েশিয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। গবেষণায় তারা অনেক এগিয়ে। সেখানে আমাদের দেশের মতো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অভিভাবকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকতে হয় না। আবার শিক্ষাব্যয়; জীবনযাত্রার ব্যয়ও কম এবং ইউরোপের দেশগুলোর তুলনায় ভর্তি প্রক্রিয়া সহজ। এসব কারণেই এখন অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছে।

এদিকে, বেশ কয়েক বছর ধরেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে দেশের শিক্ষার্থীদের বিদেশ যাত্রার প্রবণতা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশীরা বিদেশে শিক্ষার ব্যয় করেছে ৬৬ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ। বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয়কৃত এ অর্থের পরিমাণ ৮ হাজার ৭৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)।

শিক্ষাবিদদের মতে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতির কারণেই বিদেশমুখী শিক্ষার্থী বেড়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে ইউরোপিয়ান দেশগুলোয় ভিসা পাওয়া কঠিন হওয়াতে অনেকেই বিকল্প হিসেবে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশ বেছে নিচ্ছেন।

মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেনাগা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছেন মো. জারিস ইসলাম। এছাড়া তিনি ওভারসিজ হাইওয়ে নামক একটি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং পার্টনার। প্রতিষ্ঠানটি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর ভর্তি কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত। জারিস ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু উচ্চশিক্ষাই নয়, মালয়েশিয়ায় মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক সব স্তরেই বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। এর একটি প্রধান কারণ বাংলাদেশের তুলনামূলক নামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাব্যয় এবং মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় প্রায় কাছাকাছি। কিন্তু মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার মান ও পরিবেশগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে। এখানে হোস্টেলগুলোও এমন যে বাবা-মা সন্তানকে ভর্তি করিয়ে নিশ্চিন্তে দেশে থাকতে পারেন। আবার সন্তানের সঙ্গে বাবা-মায়েরও আসার সুযোগ থাকায় তারা চাইলে মালয়েশিয়াতেও চলে আসতে পারেন। ফলে অনেক অভিভাবক মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও সন্তানকে মালয়েশিয়ায় ভর্তি করাচ্ছেন।

জারিস ইসলামের মতে, শিক্ষার্থী বৃদ্ধির আরো একটি কারণ হলো বাংলাদেশে চাকরির অনিশ্চয়তা এবং মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব। তিনি বলেন, ‘মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ডিগ্রিধারীরা সহজেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পান এবং বিশ্বজুড়েই তাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে যারা বাংলাদেশের প্রথম সারির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাচ্ছেন না তাদের একটি অংশ মানসম্মত শিক্ষার প্রত্যাশায় মালয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছে।

থাইল্যান্ডের রানি জিতলেন সোনা, পদক দিলেন রাজা

বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের অন্যতম গন্তব্যস্থল ছিল যুক্তরাষ্ট্র। গত এক দশকে দেশটিতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে যেখানে এ সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮০২ জন আর ২০২৪ সালের ‘ওপেন ডোরস রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনাল এক্সচেঞ্জ’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৯৯ জন। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধের ফলে চলতি বছরে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্র যেতে ব্যর্থ হয়েছেন। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে অন্যান্য বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশে যাওয়ার সুযোগও কমেছে। এসব কারণেও শিক্ষার্থীদের একাংশ মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশকে বেছে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, ‘শিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার মূল কারণ মানসম্মত শিক্ষা ও উন্নত জীবনমানের প্রত্যাশা। যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের বেশির ভাগই বিদেশমুখী হচ্ছেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর পরিবেশও হয়তো পরোক্ষ ভূমিকা রাখছে। এর আগে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান বিভিন্ন রাষ্ট্রমুখী ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যেহেতু এসব দেশে যাওয়া তুলনমূলক কঠিন হয়েছে, তাই অনেকে হয়তো বিকল্প হিসেবে মালয়েশিয়াকে বেছে নিচ্ছেন।

ঢাকা–১৯ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা–১৯ (সাভার-আশুলিয়া) সংসদীয় আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত এমপি প্রার্থী মাওলানা মো. আফজাল হোসাইন আজ...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম

কার্যালয় : ভাদাইল, ডিইপিজেড রোড, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT