হারিয়ে যাওয়া নব্বইয় দশকের শৈশবের মধুর দিনগুলো। ছিল না আধুনিকতার ছোঁয়া;ছিল আমাদের জীবনের সবচেয়ে মধুর সময়।সন্ধ্যা হতেই ঘরে ফিরে পড়তে বসা, হারিকেনের আলোতে অথবা কুপি জ্বালিয়ে রাতে একসঙ্গে মেঝে বসে খাবার খাওয়া। শৈশবের সেই নানুবাড়ির দিনগুলো; সেই ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, এক টাকা ও দুই টাকা পাঁচ টাকার ইচ্ছে পূরণের গল্প; সেই শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে কাঁপুনি শরীরে খেজুরের রস খাওয়া; চাঁদনি রাতে সেই লুকোচুরি খেলা।দরজার পেছনে লোকানো,খেড়,পোয়ালের মধ্যে লুকিয়ে থাকতাম কেউ এলে চমকে দেব বলে।
সে আসতে দেরি করছে বলে অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে আসতাম; পূর্ণিমার রাতে চাঁদের সঙ্গে হাঁটতাম আর বলতাম, চাঁদও আমাদের সঙ্গে হাঁটছে। স্কুলে যাওয়ার সময় সবাই একসঙ্গে দৌড়ে যেতাম।কে প্রথমে ক্লাস রুমে ঢুকে। ক্লাসে কলম–কলম খেলা, খাতায় ক্রিকেট খেলা, চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ খেলা। এক টাকার রঙিন বা নারকেলি আইসক্রিম, বুনবুনি, চার পিস চকলেট, হাওয়াই মিঠাই খেতে না পারলে মন খারাপ হয়ে যেত। টাকা না পেলে মায়ের আঁচল ধরে কান্নাকাটি, হঠাৎ আকাশপথে হেলিকপ্টার গেলে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।
শুক্রবার সন্ধ্যার পর আলিফ লায়লা, সিন্দবাদ, রবিনহুড ও ম্যাকগাইভার দেখার জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করা। পড়াশোনা বাদ দিয়ে চুরি করে দেখার মজাই অন্যরকম ছিল।ফলের বিচি খেয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করতাম, পেটের ভেতর গাছ হবে কি না; মাথায় মাথায় ধাক্কা লাগলে শিং গজানোর ভয়ে আবার নিজের ইচ্ছায় ধাক্কা দিতাম; আমাদের কারও দাঁত পড়লে ইঁদুরের গর্তে দাঁতটা দিয়ে আসতাম, নাহলে আমাদের দাঁত গজাবে না।
কেউ বসে থাকলে তার মাথার ওপর দিয়ে ঝাঁপ দিতাম, যাতে সে আর লম্বা হতে না পারে।
বিকেলে কুতকুত, কানামাছি ও গোল্লাছুট ঘুড়ি ওড়ানো, ক্রিকেট , ফুটবল না খেললে বিকেলটা যেন মাটি হয়ে যেত।শৈশবকালে মাথায় চেপে বসে থাকে না কোনো চিন্তাভাবনা; শুধু খুশি, আনন্দ আর হুল্লোড়ের মধ্য দিয়ে সমগ্র ছোটবেলা কখন অতিবাহিত হয়ে কৈশোর পেরিয়ে আমরা যৌবনে প্রবেশ করি, তা বুঝতে পারি না। বুঝতে যখন পারি, তখন সেই সারল্যমাখা দিনগুলো হারিয়ে গেছে মহাকালের গভীরে। বর্তমান প্রযুক্তির ছোঁয়ায়, স্মার্টফোনের আদলে আজ বিলুপ্তপ্রায় ।













