শিশুদের অপরাধ যতই গুরুতর হোক না কেন, তাদের ১০ বছরের বেশি সাজা দেওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট বিচারপতি বিচারপতি মো. সওকত হোসেন, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এএসএম আব্দুল মবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে দেওয়া রায়ে এমন সিদ্ধান্ত আসে।
সিদ্ধান্তগুলো হলো— শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির কোনো সাক্ষ্যগত মূল্য নেই; স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি কোনো শিশুকে সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না; এবং অপরাধ যাই হোক না কেন, কোনো শিশুকে ১০ বছরের বেশি সাজা দেওয়া যাবে না।
বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে হাইকোর্টের তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট সংক্ষিপ্ত রায় দিলেও সম্প্রতি এর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন।
৬৩ পৃষ্ঠার রায়টি লিখেছেন বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস। অন্য দুই বিচারপতি তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। বাংলাদেশ, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের একাধিক মামলার নজির এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির লেখা বই, নিবন্ধ, বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফল পর্যালোচনা করে এই রায় দেওয়া হয়েছে।
রায়ে বলা হয়েছে, শিশুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ কিশোর বিচার ব্যবস্থার ধারণার পরিপন্থি। নিউরোসাইন্স এবং সাইকোলজিকাল গবেষণা অনুযায়ী শিশুরা তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল নয়।
শিশুরা তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বস্তুত, মস্তিস্কের (ব্রেইন) যে অংশ আবেগ ও যৌক্তিকতা নিয়ন্ত্রণ করে, শিশু অবস্থায় মস্তিস্কের সে অংশ পরিপক্ক হয় না।
তাই শিশুদের অপরাধ যতই গুরুতর হোক না কেন, তাদের ১০ বছরের বেশি সাজা দেওয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।