গৌরীপুরে ঠিকাদারের গাফলতিতে মাদ্রাসায় ভবন নির্মাণের কেটে গেছে ২ বছর ! অথচ নির্মাণ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ

মোজাম্মেল হোসেনঃ

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নে শালীহর এ মোতালেব বেগ দাখিল মাদরাসার ভবন নির্মাণে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও একতলা ছাঁদ পর্যন্ত হয়ে বন্ধ আছে নির্মাণ কাজ। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের আওতায় ওই মাদরাসার চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও কাজ হয়েছে মাত্র ২৫-৩০ ভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালীহর গ্রামে এ. মোতালেব বেগ দাখিল মাদরাসার চারতলাবিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ ৮০ দিন বন্ধ থাকার পর এ মাসে কাজ শুরু হয়েছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও মাদরাসার ভবন নির্মাণ শেষ হয়নি।

এই অবস্থায় সরকার যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয় এই অবস্থায় উক্ত মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের ভৌত-অবকাঠামো সমস্যার জন্য সমস্যা পোহাতে হবে।

অন্যদিকে, করোনাকালীন দায়সারাভাবে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমন অভিযোগ করেছেন এলাকার মানুষ ও এই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা এ. মোতালেব বেগ। তাদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় তদারকির অভাবেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ছাদ ঢালাইসহ অন্যান্য কাজ করছেন।

ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার তেমন কোনও ভালো শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ফ্যাসিলিটিজ বিভাগের আওতায় ওই মাদরাসার চারতলা ভবন নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৯৩ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের চারতলা ভবন নির্মাণের কাজ পান মেসার্স এসটি-এইচই (জেবি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয়রা জানায়, মাদরাসার একতলা ভবনের ছাদ ঢালাই ও ভবন নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে ময়লাযুক্ত নিম্নমানের বালু, অতি নিম্নমানের ইটের সুরকি ও খারাপ মানের সিমেন্ট। ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অধিক লাভের আশায় সংশ্লিষ্ট অ্যাস্টিমেট ডিজাইন অনুযায়ী কাজ না করে সিংহভাগ টাকা আত্মসাতের পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

তাদের অভিযোগ, কোনও প্রকৌশলী কিংবা কোনো প্রতিনিধি মাসের পর মাস উপস্থিত না থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের কাজের সুযোগ পাচ্ছে।

এ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা এ. মোতালেব বেগ গত সোমবার বিকেলে (১৬ আগস্ট) সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভবন নির্মাণের কোনও ভালো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদার তার পছন্দমতো কাজ করছেন এতে কোনও সন্দেহ নেই। আমাদের কোনও কথাই শুনছেন না তিনি। নিরুপায় হয়ে মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিকট আবেদন করেন এ মাদরাসার তত্ত্ববধায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক। আবেদনে এই দাখিল মাদরাসার ৪তলা অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ অদ্যাবধি শুরু না করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে কথা উল্লেখ ছিল। ১৮/০৮/২০১৯-এর কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী ৫৪০ দিনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরও অজ্ঞাত কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অদ্যাবধি নির্মাণ কাজ শুরু করেননি। পরবর্তীতে মহোদয়ের কার্যালয় হতে স্মারক নং-নিঃ প্রঃ(এম)/ইইডি-২৫৫৬, তারিখ: ০৯-০৭-২০২০ খ্রিঃ মূলে পত্র প্রাপ্তির ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার উপরোক্ত নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করতঃ প্রায় সাড়ে ৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও অদ্যাবধি নির্মাণ কাজ শুরু করেননি বা শুরু করার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না ওই সময়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘অবশেষে কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী ৫৪০ দিনের মধ্যে কাজ সমাপ্তির সময়সীমার ৪৮০ দিন চলে যাওয়ার পর মাদরাসার ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বর্তমান কার্যাদেশের ২ বছর পরিপূর্ণ হয়েছে এবং ভবন নির্মাণ কাজ হয়েছে মাত্র ৩০ ভাগ। তাছাড়া ৪তলা বিশিষ্ট ভবনের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই দেওয়ার পর দ্বিতীয় তলা নির্মাণের কাজ শুরু হয় ৮০ দিন পর। এভাবে চলতে থাকলে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হতে ৪ বছর লেগে যাবে।’

গৌরীপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের এম-১৫ (এম-ফিফটিন) মিডিয়া গ্রুপের অনুসন্ধানে, শিক্ষা প্রকৌশল থেকে দরপত্রে সময় বেঁধে দিলেও বাস্তবের সাথে নির্ধারিত সময়ের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মির্জা সাহেবকে মুঠো ফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ’মেসার্স এসটি-এইচই (জেবি)’ মাদরাসার পূর্নাঙ্গ ভবন নির্মাণের আরও এক বছর সময় বাড়ানো জন্য আবেদন করেন, যা এখনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি।’’

এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘১৮/০৮/২০১৯-এর কার্যাদেশ অনুযায়ী ভবনের কাজ চলছে। এখনো ৭০ ভাগ কাজ বাকি আছে। এভাবে কাজ চলতে থাকলে আরো ২-৩ বছর সময় লাগবে।’

এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাসান মারুফ বলেন, ‘কাজটি যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় তার জন্য জেলা ও উপজেলার মাসিক সভায় উত্থাপন করা হবে।’

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাত ১০টায় ভবন নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসটি-এইচই (জেবি)-এর স্বত্ত্বাধিকারী হাফেজ মো. আজিজুল হক কাজের অনিয়ম প্রসঙ্গে মুঠোফোনে এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘বিষয়টি সত্য নয়।’

তবে তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো নয় বিধায় ভবনের মালামাল পরিবহনে সমস্যা হচ্ছে। কিছুদিন কাজ করার পর আবার কাজ স্থগিত হতে পারে।’

এদিকে এম-১৫ (এম-ফিফটিন) মিডিয়া গ্রুপের ১০ জন সাংবাদিকদের সরেজমিনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গৌরীপুর থেকে শালীহর মাদরাসার কাছাকাছি যে রাস্তা রয়েছে তার মধ্যে ৯৫ ভাগ রাস্তাই পাকা। এতে মালামাল পরিবহন ও চলাচলের কোনো বিঘ্ন ঘটার কথা নয়।

এছাড়া দেখা যায়, ভবনের অনুমান ৭০ ভাগ কাজ এখনও বাকী রয়েছে।

টাঙ্গাইল শাড়ী নিয়ে ভারতে আইনি লড়াইয়ের ল’ফার্ম নিয়োগ

টাঙ্গাইলের শাড়ীর জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক স্বত্ব বাংলাদেশের রাখার জন্য ভারতে আইনজীবী নিয়োগের জন্যে সুপারিশ করেছে সরকার। শতাধিক...

Read more

সর্বশেষ

ADVERTISEMENT

© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত


সম্পাদক ও প্রকাশক : মাে:শফিকুল ইসলাম
সহ-সম্পাদক : এডভােকেট-মোঃ আবু জাফর সিকদার
প্রধান প্রতিবেদক: মোঃ জাকির সিকদার

কার্যালয় : হোল্ডিং নং ২৮৪, ভাদাইল, আশুলিয়া, সাভার, ঢাকা-১৩৪৯

যোগাযোগ: +৮৮০ ১৯১ ১৬৩ ০৮১০
ই-মেইল : dailyamaderkhobor2018@gmail.com

দৈনিক আমাদের খবর বাংলাদেশের একটি বাংলা ভাষার অনলাইন সংবাদ মাধ্যম। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে দৈনিক আমাদের খবর, অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সব ধরনের খবর প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচারিত অনলাইন সংবাদ মাধ্যমগুলির মধ্যে এটি একটি।

ADVERTISEMENT
x