বগুড়ার আদমাদিঘির কড়ই স্থানীয় ও জাতীয় ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায়। আদমদিঘি উপজেলার কুন্দগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক ধ্বংশাবশেষ রাজবাড়িটি শ্রৗকৃষ্ণ চৌধুরীর কড়ই জমিদার বাড়ি হিসাবেও সুপরিচিত। ইতিহাস আর ঐতিহ্যে ঘেরা কড়ই (করৈ) গ্রামে রয়েছে প্রাচীন সব নিদর্শন আর রয়েছে তত্কালীন ব্রাহ্মণ রাজা জমিদারদের মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। জানা গেছে, ব্রাহ্মণ জমিদার যজ্ঞেশ্বর ও জয়নারায়ণ দুই ভাই পারস্য ভাষা শিক্ষা লাভ করে নবাব সরকারের কর্মলাভ করেন। তাদের দক্ষতা, কর্তব্য ও প্রতিভার গুণে নবাবের প্রিয়পাত্র হয়ে “তলাপাত্র” উপাধি লাভ করেন। নবাবের অনুগ্রহে তরফ করৈ শেলবর্ষ ও ছিন্দাবাজু পরগনার অন্তর্গত ভূসম্পত্তির অধিকারী হয়ে নাটোর থেকে বগুড়ার আদমদিঘির কড়ই (করৈ) গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। এই সম্পত্তি পূর্বে দুনি সৈয়দ আলী চৌধুরী নামক এক মুসলমান জমিদারের অধিকারে ছিল। কালক্রমে উক্ত সৈয়দ আলী চৌধুরীর কোনও বংশধর না থাকায় ঐ জমিদারি নবাব সরকারের বাজেয়াপ্ত হয়। তারপর যজ্ঞেশ্বর ও জয়নারায়ণ তলাপাত্র নবাব সরকারের উপযুক্ত নজরদি প্রদান করে ঐ জমিদারির মালিক হন। জ্যেষ্ঠ যজ্ঞেষর নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। কনিষ্ঠ জয়নারায়ণ তলাপাত্রের ঔরসে তিলোতমা দেবীর গর্ভে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষভাগে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন। উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত গৌরীপুরের রামগোপালপুরের জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরী তার জীবদ্দশায় কড়ই গ্রামে তৎকালীন জমিদারদের সুবৃহৎ বাসভবনের ভগ্নাবশেষ বিপুল সমৃদ্ধির পরিচয় দিচ্ছিল। জয়নারায়ণ তলাপাত্রের একমাত্র পুত্র সন্তান শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর সময়ে এই বাসভবনের একাধিক উন্নতি সাধিত হয়েছিল।জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায়চৌধুরীর ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার’ গ্রন্থে কড়ই (করৈ) রাজবাড়ির সংক্ষিপ্ত বিবরণের কথা উল্লেখ রয়েছে । কড়ই রাজবাড়ি সম্বন্ধে তার কিছু উদ্ধৃতি দেওয়া হলো – ‘‘ঐ বাসভবনটি অতি বৃহৎ, চতুর্দিকে পরিখা পরিবেষ্টিত। কালের কঠোর হস্তে ইহার পূর্বের শোভা সৌন্দর্য সমস্ত বিনষ্ট হইয়াছে বটে, কিন্তু এখনও যাহা আছে তাহাতেই শিল্পপ্রিয় ব্যক্তিগণের হৃদয় মুগ্ধ হইতে পারে। দুই শত বা আড়াই শত বৎসর পূর্বে আমাদের দেশে স্থপতি কার্য কিরূপ নিপুণতার সহিত সম্পন্ন হইত উক্ত বাসভবন দৃষ্টে তাহা বিশেষরূপে উপলব্ধি হয়। চতুর্দিকে বিস্তৃত পরিখা ও তাহার পার্শ্বে সুদৃঢ় প্রাচীরের ভগ্নাবশেষ এখনও যাহা বর্তমান আছে তাহা দেখিলে ইহা যে বহিঃশত্রুর দুষ্প্রবেশ্য দুর্গের ন্যায় সুরক্ষিত ছিল তাহা স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়।”
রেনেলের মানচিত্রে আদমদিঘি ও কড়ই (করৈ>কড়রি)
বাংলার মানচিত্রের পথিকৃৎ মেজর জেমস রেনাল। জেমস রেনেল অংকিত মানচিত্র বাংলার প্রাচীন মানচিত্র। বাংলাদেশে ইতিহাস বিভাগে “Rennells Bengals Atlas” এই বিশাল মানচিত্র এক সময়ে দুষ্প্রাপ্য ছিল। শত শত বছরের প্রামাণ্য ইতিহাস রয়েছে আদমদিঘি ও কড়ই গ্রামে। এ রকম প্রাচীন ও সুস্পষ্ট ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ময়মনসিংহের গৌরীপুরে অবস্থিত ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশন হিস্টোরিক্যাল সোসাইটি ও লাইব্রেরী এবং দি ইলেক্টোরাল কমিটি ফর পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স নামে সংগঠনগুলো কাজ করছে। সংগঠনের মাধ্যমে অজানাকে জানার জন্য ইতিহাসের অপ্রকাশিত অধ্যায়, তথ্যসূত্র, জনশ্রুতি, প্রাচীন মানুষের কথা, ঝরেপড়া অপ্রকাশিত তথ্য সংগ্রহ, প্রাচীন দুর্লভ তথ্য ও প্রাচীন মানচিত্র সংগ্রহ ও গবেষণার মাধ্যমে আপডেট ইতিহাস রচনা করা হয় বা হয়ে থাকে। প্রামাণ্য দলিল হিসেবে এসিক এসোসিয়েশন ও ক্রিয়েটিভ এসোসিয়েশনের সহযোগিতায় প্রতিবছর একটি স্বনামধন্য আঞ্চলিক তথ্যবহুল ম্যাগাজিন ‘পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স’ প্রকাশিত হয়। ম্যাগাজিনে প্রকাশিত রেনেলের আড়াই শত বছর আগের কয়েকটি মানচিত্র ঘাটলে দেখা যায় তৎকালীন বগুড়ার এলাকার দিকে দৃষ্টি দিলে আদমদিঘি এবং কড়রি নামে প্রাচীন জনপদ বা প্রসিদ্ধ স্থানের নাম পাওয়া যায়। কড়ই পূর্বে করৈ বা কড়রি উচ্চারন করা হত বলে জানা যায়। আজকাল কড়ই অবস্থা দেখলে তা ভাবতেও কষ্ট হয়।
করৈর রাজবাড়িটির সংক্ষিপ্ত বিবরণ :
জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায়চৌধুরীর ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার’ গ্রন্থে কড়ইয়ের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও প্রাচীন দালানের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন
ক) বারো দুয়ারী ভগ্ন দালানঃ রাজবাড়ির মধ্যে অপূর্ব শিল্পনৈপুণ্য পূর্ণ বারদুয়ারী নামক যে এক বৃহৎ অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ
ছিল তাহা দীর্ঘে ছিল প্রায় দেড় শত ফিট । যে সকল খিলান তখনও বিদ্যমান ছিল তাহা বিশেষ সুপ্রণালী বিনির্মিত এবং সুদৃঢ়। দেওয়ালের ভিতরে ও বাহিরে খোপ কাটা, ইস্টকগুলির কারুকার্য দর্শকের চিত্তাকর্ষক। তৃণগুল্মের অত্যাচারে এই প্রাচীন কীর্তি ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে অগ্রসর হতেছিল, ছাদ ভেঙ্গে পড়িয়াছিল, দেওয়ালগুলো ফাটিয়া গিয়েছিল।
খ) কালাচাঁদের মন্দিরঃ
এই রাজবাড়িতে কালাচাঁদ নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কোন্ ব্যক্তি কর্তৃক মন্দির নির্মিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা কোন উপায় ছিল না। মন্দিরের বাহিরের এক স্থানে ১৭১৬ (বাংলা ১১২২) সনে মন্দির নির্মিত হয়েছিল বলে লেখা ছিল। এ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় যে জয়নারায়ণ তলাপাত্রের পুত্র শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী কর্তৃক মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে প্রতীয়মান হয়। কালাচাঁদের মন্দিরের সম্মুখে একটি চকমেলান দালানের ধ্বংস চিহ্ন সে সময়ে ছিল। ঐ চকমেলান দালানের দুই একটি প্রকোষ্ঠ তখনও থাকার জন্য উপযোগী ছিল। মন্দিরটি ও চকমেলান দালানের রচনাপ্রণালী বড়ই সুন্দর ও সুদৃঢ়। বাংলা ১২৯২ সনের ভূমিকম্পের পর হতে দেববিগ্রহ কালাচাঁদ মন্দির ছেড়ে রাজবাড়ির বাইরে একটি ঘরে পূজা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল। সেই স্থানেই রীতিমত সেবা চলতেছিল। কালাচাঁদ মন্দিরের সম্মুখে অর্থাৎ চকমেলান দালানের ভিতরে যে প্রাঙ্গন আছে ইহা দেখলে প্রতীয়মান হয় যে এই স্থানে সময় সময় নাট্যাভিনয় হত।
গ) দুর্গামণ্ডপ ও ভোগদালান :
কালাচাঁদ মন্দিরের দক্ষিণে দুর্গামণ্ডপ ও পার্শ্বে ভোগগৃহের ভগ্নাবশেষ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। দুর্গামণ্ডপের প্রাচীন প্রথানুযায়ী খোদাই কার্যের অপূর্ব শিল্প চাতুর্য দেখলে অবাক হওয়ার মত ছিল। দুর্গামণ্ডপের অধিকাংশ ভূমিকম্পে পতিত হয়ে গিয়েছিল। যে অংশ তখন দণ্ডায়মান ছিল তাতে শিল্প নৈপুণ্যের অপূর্ব নিদর্শন দৃষ্টিগোচর হয়েছিল।
ঘ) শিবমন্দির ঃ
রাজবাড়িতে একটি সুন্দর শিবমন্দির । মন্দিরটি যে কার কীর্তি কেও বলতে পারে না। মন্দিরটি ভগ্ন ও বৃক্ষলতায় সমাচ্ছন্ন ছিলো। ইহার গঠন-পারিপাট্য ও শিল্পনৈপুণ্য অতি সুন্দর ছিল। যদিও ইহা ফাটিয়াছিল, ভাঙিয়াছিল এবং এর কতক অংশ ভূমিসাৎ হয়েছিল, তথাপি ভগ্নখণ্ডের একখানি ইষ্টকও স্থানচ্যুত হয় নাই। চুণে ইষ্টক মিলিয়ে জমাট বান্ধিয়ে সুকঠিন প্রস্তরখণ্ডের মত খণ্ড খণ্ড ভাবে পড়িয়ে কালের সর্বনাশিনী কীর্তির মাহাত্ম্য প্রকটিত করতেছিল। দেওয়ালের উপরিভাগে এক স্থানে কারুকার্যেরও চিহ্ন দেখা গিয়েছিল।
ঙ) অন্তঃপুরের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ঃ
অন্তঃপুরে অনেকগুলি অট্টালিকার ধ্বংস চিহ্ন তখনও ছিল। স্থানে স্থানে ইটেরস্তূপ, স্থানে স্থানে ভগ্ন প্রাচীর, স্থানে স্থানে কারুকার্য পূর্ণ প্রাচীরের ভগ্নাংশ দেখলে এই অন্তঃপুর যে কিরূপ সুবিশাল ও বহু সৌধমালায় অলঙ্কৃত ছিল তাহা স্পষ্টই অনুমিত হয়েছিল। অন্তঃপুরে প্রবেশ করবার পথে একটি তোরণদ্বারের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। মনে হয় এককালে অস্ত্রধারী প্রহরীগণ এইস্থানে দণ্ডায়মান হয়ে প্রহরায় নিযুক্ত থাকত।
এক শত বছর আগেও অন্তঃপুরে সেসময়ের একটি দ্বিতল প্রাসাদ ছিল। ইহার নিচ তলের অবস্থা অনেকটা ভাল ছিল। নিচ তলার একটি ছোট কুঠুরির মধ্যে সুড়ঙ্গের মত গর্ভের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। সেসময়ের স্থানীয় লোকেরা বলত যে এই সুড়ঙ্গ পথে অনেকদিন ধনাগার ছিল। এই স্থান হতে ধনদৌলত লাভ করবার জন্য অনেক সময় গরীব লোকেরা মাটি খনন করত । পিতলের অট্টালিকার প্রাচীরগুলি তখনও অনেকটা দণ্ডায়মান ছিল। প্রাসাদটি খুব শক্ত ছিল। ঝড় বজ্রাঘাত ও ভূমিকম্পের ভীষণ বেগ সহ্য করে এবং সর্বশক্তিমান কালের সঙ্গে যুদ্ধ করে তখনও এটি দণ্ডায়মান ছিল। ইহার নিচতলায় প্রাচীরের উচ্চস্থানে কতকগুলি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র বা ফাঁক ছিল। ঐ ছিদ্র পথে অল্প পরিমাণ আলোক ও বায়ুর সমাগম হতে পারত। কি কারণে ঐ প্রাসাদ নির্মিত হয়েছিল তা কেউ জানত না। তখন বোধ হয়েছিল এটা ধনাগার কিম্বা কারাগারের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল।ছ) কালীমন্দির সম্বন্ধীয় কিংবদন্তী ঃ
এই প্রাসাদের সামান্য দূরে একটি মন্দির ছিল। ঐ মন্দিরে কোনও দেবমূর্তি ছিল না। কোন বিগ্রহ এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা জানা উপায় ছিল না। জনশ্রুতিতে এখানে একটি কালী-মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিংবদন্তী এইরূপ ছিল যে, কোনও গুরুতর অপরাধীকে বিশেষরূপে দণ্ডিত করবার জন্য এই স্থানে আনয়ন করে কালীর সামনে বলিদান করা হত। মন্দিরটি মজবুত ও বহু পুরাতন ছিল। কালের আবর্তনে ইহার কিছু অংশ ভেঙ্গে মাটির মধ্যে পড়ে থাকায় দরজা বন্ধ হয়েগিয়েছিল, ভিতরে প্রবেশের পথ ছিল না, ভিতরের শিল্পকার্য জানবার উপায় ছিল না।
জ) অন্দরমহল বা অন্তঃপুরটি দুই ভাগে বিভক্ত ;
শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরির দুই পত্নীর বাসের জন্য অন্দরমহলটি দুই অংশে বিভক্ত হয়েছিল। অন্তপুরে অনেকগুলি লোকালয়ের চিহ্ন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল।
ঝ) সুড়ঙ্গ সম্বন্ধে প্রবাদ :
রাজবাড়ির মধ্যে একস্থানে একটি সুড়ঙ্গ পথ দেখা গিয়েছিল। ঐ স্থানে তা ইট ও মৃত্তিকা দ্বারা বন্দ ছিল। কিন্তু এক সময়ে ঐ সুড়ঙ্গ পথে যে কোনও গুপ্ত স্থানে গমনাগমন করা যেত তা সন্দেহমাত্র ছিল না। জনশ্রুতি অনুসারে জানা গিয়েছিল যে, ঐ সুড়ঙ্গ মধ্যে অস্ত্রশস্ত্রাদি লুক্কায়িত থাকত। অস্ত্রাগার বা ধনাগার অথবা তদ্রুপ কোনও বিশেষ প্রয়োজনীয় গুপ্ত গৃহ ঐ সুড়ঙ্গ শেষে যে সংস্থাপিত ছিল, তাই অনুমান হয়েছিল। এই পরিখাবেষ্টিত, শক্ত প্রাচীর দ্বারা সুরক্ষিত অগণ্য অট্টালিকা শ্রেণীতে পরিপূর্ণ, দেবালয়, উৎসবালয়, কারাগার ও অস্ত্রাগার দ্বারা সজ্জিত সুবিশাল রাজবাড়ির অধিকারী কিরূপ ক্ষমতাশালী ও ঐশ্বর্যের অধিকারী ছিলেন তা সহজেই অনুমিত হতে পারা যেত। সেসময়েব অতীত গৌরবের ক্ষীণ চিহ্নগুলি যা দেখা গিয়েছিল বর্তমানে থাকলে তা দেশের হেরিটেজ ছিল।
ঞ) কড়ই রাজবাড়ির সম্বন্ধে একটি প্রবাদঃ
কড়ই রাজবাড়ির সম্বন্ধে একটি প্রবাদ প্রচলিত ছিল যে, এই বাড়ির মধ্যে একটি মালখানা (ধনাগার) আছে এবং তথায় প্রচুর ধনরত্ন লুকিয়ে আছে। এই জনশ্রুতিতে বিশ্বাস করে সে সময়ে কৃষকগণ তখনও স্থানে স্থানে খনন করে ধনরত্নের অনুসন্ধান করে থাকত। সেসময়ের করৈর জমিদারগণ যখন এই স্থান পরিত্যাগ করে গিয়েছিলেন, তখন পথে দস্যুর আশঙ্কা করে ধন-রত্নাদি সঙ্গে লয়ে যাত্রা করে নাই। অধিকাংশ ধন এই রাজবাড়িতেই কোনও গুপ্ত স্থানে লুক্কায়িত করে গিয়েছিল। কোন কারণে তারা আর এই বাড়িতে ফিরে আসে নাই। এই প্রবাদ বাক্যটি যে কতদূর বিশ্বাস্য ছিল তা সহজেই বুঝা যেত। কিন্তু ধনের আশাও অতৃপ্ত লালসা যখন জ্ঞানীমানুষকেও অন্ধপথে পরিচালন করে থাকে তখন নিরক্ষর কৃষকের অপরাধ কি?ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায় এবং বর্তমান(২০২৩ সাল) কড়ই গ্রাম ও স্থানীয় লোকদের অনলাইনে মতামতঃ
দেবনাথ বলেন, শ্রীকৃষ্ণ চেীধুরীর পরবর্তী বংশধর গৌরীপুর জমিদারদের নাম তাদের কাগজপত্রে রয়েছে। যেমন কালীপুর জমিদার বংশের ধরণীকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী, স্ত্রী রামরঙ্গিনী দেবী, ছেলে নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ী চৌধুরী, নরেন্দ্রকান্ত লাহিড়ীর ছেলে ধীরেন্দ্রকান্ত (ডি কে) লাহিড়ী চৌধুরী, গোলকপুর জমিদার বংশের রাজা হরিশচন্দ্র চৌধুরী তার দত্তক পুত্র কুমার উপেন্দ্র চন্দ্র চৌধুরী পুত্রবধু ইন্দ্রবালা দেবী, ভবানীপুর জমিদার বংশের গিরিশ চন্দ্র চৌধুরী ছেলে (দত্তক পুত্র) রায়বাহাদুর সতীশ চন্দ্র চৌধুরী তার ছেলে বাবু যতীশ চন্দ্র চৌধুরী রায়বাহাদুর ও বাবু প্রিতীশ চন্দ্র চৌধুরী রায়বাহাদুর ইত্যাদি।
শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক বিদ্রোহ দমন ও ময়মনসিংহ (মোমেসিং) পরগনা প্রাপ্তি ঃ
শ্রীকৃষ্ণ অত্যন্ত মেধাবী ও অসাধারণ বলবান ছিলেন। ইংরেজ আমলে রাজানুগ্রহ লাভ করতে হলে ইংরেজি শিখতে হয়, পূর্বে তদ্রূপ মুঘল আমলে পারসি শিক্ষা ব্যতীত উচ্চরাজকার্য প্রাপ্তি ঘটিত না। শ্রীকৃষ্ণের পিতা,পিতামহ সকলেই নবাব সরকারে চাকরী করে বিশেষ প্রতিপত্তি লাভ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণও পিতৃ পথানুসরণ করে নবাব দরবারে পরিচিত ও প্রতিপন্ন হবার উদ্দেশ্যে পারস্য ভাষা শিক্ষা লাভ করে প্রথম যৌবনে তিনি স্বীয় বিষয় সম্পত্তির তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হয়েছিলেন। কিছুদিন পর কৃষ্ণ চৌধুরির মুর্শিদাবাদে গমন করাই স্থির করলেন। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে কোন পরাক্রান্ত জমিদার অত্যন্ত প্রবল হয়ে উঠেন ও নবাবকে উপেক্ষা করে স্বীয় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার দমনের জন্য নবাব সৈন্য প্রেরণ করেন; কিন্তু তারা পরাস্ত হয়ে পড়তেন। নবাব বিশেষ ক্র ুদ্ধ হয়ে পুনরায় অনেক সৈন্যসহ একজন বিশিষ্ট সেনাপতি প্রেরণ করেন। সৈন্য হতাহত ও সেনাপতি লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে আসেন। এক জন বিদ্রোহী জমিদার এইরকম বলবৃদ্ধি শুভকর নয় ভাবে তার দমনের জন্য শ্রীকৃষ্ণের উপর ভার অর্পণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ বিশিষ্ট সৈন্যদল নিয়ে ঐ স্থানে উপস্থিত হন এবং সেখানে শিবির স্থাপনপূর্বক পূর্বোক্ত বিদ্রোহী জমিদারের নিকট বন্ধুভাবে সংবাদ প্রেরণ করেন যে, “সম্রাটের আদেশমত আমি পূর্ণিয়ায় নবাবকে ধৃত করবার জন্য যাচ্ছি, আপনি শক্তিমান এবং সম্রাটের হিতৈষী, আপনার সাহায্য লইবার জন্য বাদসাহের আদেশ আছে। অতএব আপনি আমাকে সৎপরামর্শ ও সাহায্য দানে বাদসাহের কার্যসাধন ও নিজের স্বার্থ- সাধন করবেন। ভরসা করি এই সুযোগ ত্যাগ করবেন না।” জমিদার এ প্রস্তাবে অন্ধ হয়ে নবাব হওয়ার স্বপ্ন দেখলেন। নিজের সামান্য শক্তিকে তিনি প্রবল শক্তি বলে বোধ করলেন, তার ক্ষমতার কথা সম্রাট জানতে পেরেছেন এবং সাহায্য পর্যন্ত চেয়েছেন, একি কম কথা! পুর্ণিয়ার নবাবের পদে তাকে স্থাপিত করা বাদসাহের ইচ্ছা হতে পারে। এইরূপ স্বপ্নে কুয়োর মধ্যে তিনি পড়ে গেছেন এবং জমিদার শ্রীকৃষ্ণের জালে পড়লেন। তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য শিবিরে হাজির হলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাকে গ্রেপ্তার করে মুর্শিদাবাদে প্রত্যাগত হলেন। রাজস্বের জন্য জমিদার কারারুদ্ধ হলেন, তার জমিদারি বাজেয়াপ্ত হল। নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ শ্রীকৃষ্ণের এইরূপ কার্যকুশলতা দেখে বড়ই খুশি হলেন এবং দিল্লির সম্রাটের নিকট এই বিদ্রোহ দমনের বিষয় জানালেন। দিল্লির বাদসাহ শ্রীকৃষ্ণের পদোন্নতি ও যথোপযুক্ত পুরষ্কার প্রদান করতে আদেশ দিলেন। ঐ সময় শ্রীকৃষ্ণ চেীধুরী সরকার বাজুহার অন্তর্গত ময়মনসিংহ পরগনা প্রাপ্ত হলেন। ঐ বৃহৎ পরগণা পূর্বে মোমেনসিং বা মোমিনশাহী নামে অভিহিত হত। জঙ্গলবাড়ির দেওয়ান বংশের প্রতিষ্ঠাতা ঈশা খাঁ পূর্বে এই মোমেনশাহী পরগনার অধিকারী ছিলেন। কালক্রমে ঈশা খাঁর অনুসারী রোমান্টিক হিরু খাজা উসমান খাঁ লোহানী, মুঘল দেওয়ানগণ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে এই জমিদারি মঙ্গলসিদ্ধ গ্রাম নিবাসী দত্ত বংশীয়দিগের অধিকারগত হয়। দত্ত বংশীয়েরাই কিছুদিন পরগণার অধিকারী ছিলেন। কালক্রমে রামপুরের নন্দী বংশীয় কোন ব্যক্তি দত্ত বংশে বিবাহ করে বিবাহের যৌতুক স্বরূপ ঐ জমিদারির ছয় আনা অংশ প্রাপ্ত হন। মুর্শিদাবাদে নবাব সরকারে রাজস্ব প্রদানপূর্বক বহুদিন হতেই নির্বিবাদে জমিদারি উপভোগ করে আসচ্ছিল। স্বার্থ-চিন্তা ও গৃহ-বিবাদের অগ্নিতে দত্তনন্দী বংশীয়দের সুখশান্তি ভস্মীভূত এবং তাদের জমিদারি বাজেয়াপ্ত হয়
শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদ রায় চৌধুরী নেত্রকোণার মদনপুর ও বেকৈরহাটির নিকট নন্দীপুর গ্রামে কাছারি বাড়ি নির্মাণ করেন। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগরে অবস্থিত বাসাবাড়ি শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর মোমেনসিং পরগানার প্রধান কাননগু অফিস ও কাছারি বাড়ি ছিল। চাঁদ রায় বৃদ্ধ পিতার অদেশানুসারে বগুড়ায় অবস্থিত শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর কড়ই নামক বাসস্থান হতে বোকাইনগর বাসাবাড়ি অভিমূখে যাত্রা করেন। পরবর্তীতে মোমেনসিং পরগনার মধ্যস্থলে জমিদারি কার্য পরিচালনা এবং প্রজাবিদ্রোহ দমনের জন্য নন্দীপুরে বাসস্থান নির্মাণের এক মাত্র উদ্দেশ্য ছিল। তৎকালীন নবাব আলীবর্দী খাঁ এর আমলে চাঁদ রায়ের চব্বিশ বিঘা আয়তনের সুবিশাল দীঘি খনন করা হয়েছিল নন্দীপুরে। দীঘির পাড়সহ ৪০টি বাড়ির জন্য গুচ্ছ গ্রামের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সরকার। এখনও চাঁদ রায়ের চব্বিশ বিঘা দীঘিটি অতীত গৌরবের নিদর্শন স্বরূপ বর্তমান আছে।শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর বংশধর ও উত্তরাধিকারঃ
বগুড়া জেলার কড়ই জমিদার ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত তৎকালীন মোমেনসিং ও জাফরশাহী পরগানার জায়গীরদার, নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ের কাননগু পদের অধিকারী এবং গৌরীপুরের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদারদের প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী কড়ই রাজবাড়িতে দুই বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম পত্নীর নাম ছিল সর্বজয়া দেবী এবং দ্বিতীয় পত্নীর নাম ছিল মহেস্বরী দেবী। শ্রৗকৃষ্ণের জীবদ্দশায়ই মোমেসিং পরগনায় জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদ রায় এবং কড়ই রাজবাড়িতে চাঁদ রায়ের ছেলে সোনা রায় এবং দ্বিতীয় তরফের মধ্যম ছেলে হরিনারায়ণ চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরী ১৭৫৭/১৭৫৮ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। আদমদিঘির কড়ই রাজবাড়িতে তার প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তানরা আগে থেকেই পৃথকভাবে বসবাস করতেন। তারা পৃথক বাড়িতে থাকলেও শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর মৃত্যুর পর বিষয় সম্পত্তি অবিভক্ত ছিল। জমিদারির শাসন, সংরক্ষণ, তদারকি একযোগে হতো। জমিদারির দাপ্তরিক কাজও একত্রেই হতো। পরে ভ্রাতৃবিরোধ ও আত্মকলহে এই পরিবারের বন্ধন পৃথক হয়ে যায়। শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর মৃত্যুর পর কৃষ্ণকিশোর, কৃষ্ণগোপাল, গঙ্গানারায়ণ ও লক্ষীনারায়ণ এই অবশিষ্ট চার ভাই সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হন। চার ভাইয়ের মধ্যে দু’টি তরফ গঠিত হয়েছিল- তরফ রায় হিস্যা ও তরফ চৌধুরী হিস্যা।
শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর জ্যেষ্ঠ পুত্র চাঁদ রায় তার নাতনী সোনা রায়ের মৃত্যুর পর তরফ রায়চৌধুরীর অবশিষ্ট দুই পুত্র নিঃসন্তান থাকায় পলাশী যুদ্ধের পরে কৃষ্ণগোপাল দত্তক নিয়েছিলেন মাধবী তথা আলেয়ার গর্ভজাত সিরাজপুত্রকে। তখন দত্তক পুত্রের বয়স ছিল ৬ বছর। নবাব সিরাজের পুত্রের নয়া নামকরণ হয় যুগলকিশোর রায়চৌধুরী। কড়ই রাজবাড়িতে এভাবেই নতুন করে যাত্রা শুরু করে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বংশ।
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট চাকলায় ফকির মজনু শাহ এর ভয়ে শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর দুই তরফ কড়ই রাজবাড়ি ত্যাগঃ
সে সময় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট চাকলায় ফকির মজনু শাহ নামে একজন কুখ্যাত দস্যু ছিল। তার ভয়ে সমস্ত চাকলা কম্পিত হতো। অত্যাচারী ব্রিটিশ কোম্পানি, জমিদার বা পুতুল নবাবদের বিরুদ্ধে লড়াকু নেতা ফকির মজনু শাহ-এর প্রভাবে তরফ রায় ও তরফ চৌধুরী উভয় দলই আত্মকলহের পরিবর্তে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাতে লাগেন। ফকির মজনু শাহ-এর অত্যাচার ও বিদ্রোহী জমিদার মীর সাহেবের শত্রুতাবশত বগুড়ার আদমদিঘির কড়ই গ্রাম ত্যাগ করে জামালপুর জেলা অন্তর্গত জাফরশাহী পরগনায় কৃষ্ণপুর গ্রামে (বর্তমান জেলা শহর) তরফ রায়চৌধুরীর রাজপরিবার এবং মালঞ্চ গ্রামে তরফ চৌধুরীর রাজপরিবার বসবাস করতে শুরু করেন। ঢাকায় অবস্থিত তৎকালীন প্রাদেশিক শাসনকর্তা মুহাম্মদ রেজা খানের নিকট আবেদন করার পর শ্রীকৃষ্ণ চৌধুরীর সমস্ত সম্পত্তি সমান দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একাংশ তরফ রায় হিস্যা ও অপরাংশ তরফ চৌধুরী হিস্যা প্রাপ্ত হলেন। এর মধ্যদিয়ে বহুদিনের আত্নবিরোধ শেষ হয়।বাংলা ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে জমিদার যুগলকিশোর রায় চৌধুরী জাফরশাহী পরগনা ত্যাগঃ
জমিদার যুগলকিশোর রায় চৌধুরী জাফরশাহী পরগনা অর্থাৎ জামালপুরের কৃষ্ণপুরে (বাংলা ১১৭১, ইংরেজি ১৭৬৫ সাল হতে বাংলা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর, ইংরেজি ১৭৭০ সাল পর্যন্ত জমিদারি করে আসছিলেন। ১৭৭০ সালের মহামারীর ফলে তিনি জাফরশাহী পরগনা ত্যাগ করে মোমেনসিং পরগায় এসে গৌরীপুর কাছারি নামে একটি শহর বা বন্দর প্রতিষ্ঠা করেন।রামগোপালপুরের জমিদার শ্রী শৌরীন্দ্র্রকিশোর রায়চৌধুরীর ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘ময়মনসিংহের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ জমিদার’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, “গৌরীপুর ঐ সময়ে বন জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল, কতিপয় নিচ জাতীয় লোক মাত্র গ্রামের অধিবাসী ছিল। যুগলকিশোর রায়ের আগমনে গৌরীপুর জনকোলাহলে মুখরিত হইয়া উঠিল। বনজঙ্গল পরিষ্কৃত হইল; বহু সংখ্যক বাসগৃহ নির্মিত হইল। যুগলকিশোর রায় নিরাপদ নিশ্চিন্ত হইয়া বিষয়কর্মে নিবিষ্ট হইলেন।’’ পেন অ্যাওয়ার্ড অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত কয়েকটি রেনেলের মানচিত্র ঘাটলে দেখা যায়, মানচিত্রগুলোতে বোকাইনগর নামটি কমন রয়েছে তখন বোকাইনগর ছিল প্রাচীন শহর এবং গৌরীপুর ছিল নব্য শহর। গৌরীপুরের সবচেয়ে বিখ্যাত জমিদারি হলো গৌরীপুর জমিদারি’, যা মযমনসিংহের একটি বড় অংশ ছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা জমিদার ছিলেন নবাব সিরাজের পুত্র যুগল কিশোর রায়চৌধুরী। ২০১২ সালে প্রকাশিত হয় অমলেন্দু দে’র বই ‘সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে’। ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. অমলেন্দু দে। তিনি ছিলেন কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সিরাজের বংশধরদের নিয়ে ৫০ বছরের অনুসন্ধানের ভিত্তিতে তিনি গবেষণামূলক বইটি প্রকাশ করেন। ২০১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সেবছরই বইটি কমরেড মুজফফর আহমদ স্মৃতি পুরস্কার লাভ করে।