আরিফুল ইসলাম: কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমের ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে । ঠিক এসময়ই ধান ক্ষেতে ব্যাকটেরিয়াল লিফ ব্লাইড (বিএলবি) ও ব্লাস্ট রোগের হানায় ফসল হানির আশংকায় দিশেহারা চাষীরা। এবছর চৈত্রের অতিবৃষ্টির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
যাদের নিজস্ব আবাদি জমি নেই তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ধান চাষ করেছেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন উৎপাদিত ধানে পরিবারের সদস্যদের দু’বেলা খাবারের নিশ্চিত মজুদ হবে। কিন্তু ভেসে গেল চাষীদের সে স্বপ্ন। দূর থেকে দেখে মনে হয় ক্ষেতের ধান পেকেছে। কিন্তু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায় উল্টো চিত্র।
ধান আছে ঠিকই, তবে ধানে চাল নেই। পাতা পোড়া ও ব্লাস্ট রোগের হানায় পুড়ে গেছে ক্ষেত। আগাম জাতের ব্রি-২৮ ধান চাষ করে ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের বহু কৃষক। ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত ক্ষেতে গিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখা গেছে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের মোসলেম উদ্দিন নামের এক ধান চাষীকে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি-২৮ জাতের অনেক ক্ষেতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। উপজেলার শাহবাজার থেকে গেটের বাজার সড়কের দু’পাশে তাকাতেই দেখা য়ায়, ব্যাকটেরিয়া জনিত পাতা পোড়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে শত শত বিঘা জমির ধানক্ষেত। আর রোগের হানায় ফলন বিপর্যয় হওয়ার শঙ্কায় আছেন এ অঞ্চলের বহু কৃষক।
বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনীরাম গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, মানুষের কাছে ধার-দেনা করে ১২ শতাংশ জমিতে ধান লাগিয়েছি। রোগ ধরে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আবাদ তো শেষ হয়ে গেল। আমরা এখন খাবো কী? একই ইউনিয়নের ঘোগারকুটি গ্রামের মুকু মিয়া বলেন, অন্যের কাছে দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছি। হঠাৎ করেই ধান গাছের পাতা ও শীষ শুকাতে শুরু করে। তখন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে তিনি ওষুধ লিখে দেন।
সেই ওষুধ জমিতে স্প্রে করেও ফসলের কোনো উন্নতি হয়নি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা জানান, এবারে প্রতি বিঘা জমি চাষাবাদ করতে ১৩-১৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ধান মাড়াই করে বিঘায় ২ মণ ধানও পাওয়া যায়নি। ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন আমরা সরকারি সহযোগিতা চাই।
উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ধান ক্ষেতে ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের আক্রমণে কিছু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আক্রান্ত ক্ষেত হতে কৃষকরা কিছুটা কম ফলন পাবেন।